সংসদ ভবন এলাকায় সাংসদ ঊষাতন তালুকদারের বাসায় ঢুকে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদা না দিলে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে শেরেবাংলা নগর থানায় অভিযোগ করেছেন সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। পার্বত্য রাঙামাটি এলাকার স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
সাংসদ ঊষাতন তালুকদারের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সংসদ সদস্য ভবন থেকেই গতকাল শুক্রবার রাতে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবারই তাঁদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত রিমান্ড না দিয়ে আসামিদের এক দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন। আসামিরা এখন কারাগারে।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি জি বিশ্বাস আজ প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ ঊষাতন তালুকদার অভিযোগ করেছেন, বৃহস্পতিবার রাতে সাতজন লোক তাঁর সংসদ ভবনের অফিসে ঢুকে ঈদ বকশিশ বাবদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাংসদ ঊষাতন তালুকদার মামলায় বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সংসদ সদস্য ভবন-২-এর ২০৩ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন। আসামিরা বেআইনিভাবে তাঁর অফিসকক্ষে ঢুকে পড়েন। পরে নিজেদের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছোট ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে তাঁর কাছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। তখন আসামিরা বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আসামিরা তাঁকে (ঊষাতন) হত্যার হুমকিও দেয়। হত্যার হুমকি দেওয়ার এ ঘটনা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান সাংসদ উষাতন তালুকদার।
ঘটনা প্রসঙ্গে সাংসদ ঊষাতন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ঢুকে আসামিরা নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাঁর কাছে চাঁদা চান। চাঁদা দিতে না চাইলে নানা প্রকার হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁকে উঠিয়ে নেওয়ার হুমকিও দেন। আদালতের কাছে পুলিশও এক প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, সাংসদ ঊষাতনের কাছে আসামিরা দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে ঈদ বকশিশ বাবদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন।
চাঁদা দাবি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে একজন বাঘাইছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র। তাঁর নাম মোহাম্মদ আলমগীর (৩৭)। অপর ছয়জন হলেন যশোর ঝিকরগাছার ওলিয়ার রহমান (৩৭), চট্টগ্রাম হালিশহরের মো. রাজু (২৫), ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শাখাওয়াত হোসেন সোহেল (৩৫), যশোর কোতোয়ালির শিমুল হোসেন (২৪), কক্সবাজারের উখিয়ার ফয়সাল মাহমুদ রেদওয়ান (২১) ও উখিয়ার মাইনুদ্দিন শাহীন (২১)।
সাবেক মেয়র আলমগীরসহ সাতজনকে গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। অপরাধী চক্র শনাক্ত করার জন্য আসামিদের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ মনিরুজ্জামান। তবে আদালত পুলিশের আবেদনে সাড়া না দিয়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সাবেক মেয়র আলমগীরসহ অন্য আসামিদের আইনজীবী আদালতের কাছে তাঁর মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করেন। ষড়যন্ত্র করে তাঁদের বিরুদ্ধে এ মামলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা। আলমগীরসহ সাতজনের আইনজীবী জয়দেব বড়াল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সাবেক মেয়র আলমগীর সাংসদ ঊষাতন তালুকদারের কাছে নয় লাখ টাকা পাবেন। সোনালী ব্যাংক এবং একটি পরিবহনের মাধ্যমে সাংসদ ঊষাতনকে এই টাকা দেন আলমগীর। এর রসিদও আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে তিনি জানান।
তবে সাংসদ ঊষাতন তালুকদার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, আসামি আলমগীর তাঁর কাছে কোনো টাকা পাবেন না। ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে আদালতে জমা দিয়ে তাঁর কাছে টাকা পাওয়ার মিথ্যা দাবি করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের মধ্যে একজন সাবেক মেয়র। বাকিদের পেশা কী, তা জানার চেষ্টা চলছে। আর সাংসদের কাছে চাঁদা দাবি করার এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। আইনজীবী জয়দেব বড়াল জানান, আসামি শিমুল হোসেন ব্যাংকে চাকরি করেন বলে তাঁকে জানানো হয়েছে। বাকিদের কেউ কেউ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী বলে তাঁর কাছে দাবি করা হয়েছে।
এদিকে সংসদ সদস্য ভবনের মতো সুরক্ষিত স্থানে ঢুকে চাঁদা চেয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। গ্রেপ্তার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন স্বতন্ত্র এই সাংসদ।
- ব্রেকিংবিডিনিউজ২৪ / ০৯ জুন ২০১৮ / তানজিল আহমেদ